top of page

আজমির শরীফ

উপমহাদেশের সব মুসলিমদের কাছেই এই স্থানটি ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে সুপরিচিত। একই সাথে রয়েছে অসংখ্য ইতিহাস। পবিত্র স্থান হিসাবে অনেক মুসলিম ওখানে যান । কিন্তু কি তার ইতিহাস, কি হয়েছিলো সেখানে সে বিষয়ে আমাদের আগ্রহ থাকলেও জানি কত টুকু ? তাই নিজের ভ্রমন সময়ে খাদেমদের সাথে কথা বলে ও বই পত্র থেকে পাওয়া ইতিহাস নিয়ে এই লেখা।


পাহাড় বেষ্টিত আনা সাগরের তীরে প্রায় ৪৮৬ ফুট উচ্চতায় আজমীর শরীফ দরগা। দরগার ভেতরে রয়েছে ভেলভেট কাপড়ে মোড়া সাদা মর্মরের ধর্ম গুরু খাজা মৈনুদ্দিন চিস্তির সমাধি বেদি যা রুপার রেলিং দিয়ে ঘেরা । রয়েছে সোনায় মোড়া গম্বুজাকৃতি সিলিং। এই সমাধী বেদির অদূরে রয়েছে মৈনুদ্দিন চিস্তির কন্যা বিবি হাফিজ জামাল ও শাহজাহান কন্যা চিমনি বেগমের সমাধি। এই মজার রয়েছে দুটি মসজিদ ও একটি সম্মেলন কক্ষ। দরগাটির ঢোকার মুখেই রয়েছে রুপার পাতে মোড়া বুলন্দ দরজা।


খাজা মইনুদ্দিন চিশতি হলেন ভারতীয় উপমহাদেশের সবচেয়ে বিখ্যাত সুফি সাধক। তিনি গরিবে নেওয়াজ এবং সুলতানুল হিন্দ নামেও পরিচিত। তিনি ভারতে চিশতি তরিকা বা ধারার মাধ্যমে আধ্যাত্মিক ধারা বা সিলসিলা এমনভাবে পরিচিত করেন, যা সাধারণ মুসলামনের আত্মবিকাশে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। খাজা মঈনুদ্দিন চিস্তি পারস্য থেকে ভারতে এসেছিলেন এবং দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিতদের সাহায্য ও সমর্থন করার জন্য তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। দরগাহটি খাজা মঈনুদ্দিন চিস্তির শেষ বিশ্রামস্থল এবং এটি মুঘল সম্রাট হুমায়ুন কর্তৃক নির্মিত বলে মনে করা হয়। রাজস্থান ও উত্তর প্রদেশের সীমান্ত ঘেঁষা আজমির খাজা মইনুদ্দিন চিশতি (রহ.)- এর মাজার ও দরগাহের জন্য পরিণত হয়েছে উপমহাদেশের আধ্যাত্মিক রাজধানীতে।



দরগাটির ঢোকার মুখেই রয়েছে রুপার পাতে মোড়া বুলন্দ দরজা।


খাজা মৈনুদ্দিন চিশতি ছিলেন ভ্রমণ প্রেমী মানুষ। ওনার ছাত্র জনাব কুতুবুদ্দিন বখতিকে সাথে নিয়ে হজ্ব পালনের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন মক্কায়। হজ্ব পর্ব শেষ করে মদীনা শরীফ এসে হজরত খাজা মইনুদ্দিন চিশ্তী (রঃ) রসুলে পাক(সাঃ) এর কাছ থেকে এক অবিস্মরনীয় সুসমাচার। হযরত রসুলে পাক(সাঃ) জ্যোতির্ময় চেহারায় আবির্ভুত হয়ে জানালেন,”প্রিয় মইনুদ্দিন। তুমি আমার ধর্মের মইন(সাহায্যকারী)। আমি তোমাকে হিন্দুস্থানের বেলায়েত প্রদান করলাম। হিন্দুস্থান অন্ধকারে নিমজ্জিত। তুমি আজমীরে যাও । তোমার মাধ্যমে পবিত্র ইসলামের প্রসার ঘটবে। সুসমাচার শুনে পরিতৃপ্ত হলেন খাজা মইনুদ্দিন চিশ্তী (রঃ)। পরক্ষনেই চিন্তিত হলেন তিনি। কোথায় আজমির? বিশাল হিন্দুস্থানের কোন দেশে আছে রসূল নির্দেশিত আজমীর?



সফর শুরু হলো। সঙ্গে সাথী কুতুবুদ্দিন। এগিয়ে চলল হজরত খাজা মইনুদ্দিন চিশ্তী (রঃ) এর বেহেশতী কাফেলা। এখন আর কাফেলা দুইজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বিভিন্ন স্থানে বিরতির সময় সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন কিছু খাটি আল্লাহ অনুরক্ত ফকির দরবেশ। আস্তে আস্তে এর সংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে চল্লিশে। সঙ্গি সাথীসহ দিল্লী এসে উপস্থি হলেন হজরত খাজা মইনুদ্দিন চিশ্তী (রঃ)। দিল্লীর শাসক তখন হিন্দুরাজা খান্ডরাও। আজমীর অধিপতি পৃথ্বিরাজের ভাই ছিলেন তিনি। রাজমহলের অদুরেই নির্মিত হলো ফকির দরবেশদের ডেরা। নির্ভয়ে তারা শুরু করলেন তাদের নিয়মিত ইবাদত বন্দগী। ক্রমে ক্রমে ইসলামের আলো প্রসারিত হতে থাকলো। কিন্তু গন্তব্যত এখানে নয় । এগিয়ে যেতে হবে আরো সন্মুখে। রসুল পাক(সাঃ) এর নির্দেশিত সেই আজমীরের আকর্ষন একসময় উদ্বেলিত করে তুললো খাজা মইনুদ্দিন চিশ্তী (রঃ) এর অন্তরকে। দিল্লীর কুতুব হিসেবে নির্বাচিত করলেন হযরত কুতুবুদ্দিন বখতিয়ার কাকী(রঃ) কে।


আজমির শরীফে লেখক


খাজা মইনুদ্দিন চিশ্তী (রঃ) তার আত্নোৎসর্গকারী ফকির দরবেশদের নিয়ে রওয়ানা হলেন আজমীর। একসময় আজমীর শহরের উপকন্ঠে এসে উপস্থিত হলেন খাজা মইনুদ্দিন চিশ্তী (রঃ) । সফর সঙ্গিগন সবাই পরিশ্রান্ত । চারিদিকে পাহাড়,পাথর মরুভুমি।নিকটেই বৃক্ষছায়া। এখানেই বিশ্রামের জন্য উপবেশন করলেন দরবেশদের কাফেলা।

স্থানটি ছিল রাজা পৃথ্বিরাজের উট বাহিনীর বিশ্রাম স্থল । রাজার লোকেরা কিছুক্ষন যেতে না যেতেই সবাইকে স্থান ত্যাগ করতে বলল। বিস্মিত হলেন খাজা মইনুদ্দিন চিশ্তী (রঃ) । উটের দলতো এসে পৌছবে সেই সন্ধ্যাবেলায় । অথচ লোকগুলি তাদেরকে এখনই তাড়িয়ে দিতে চায়। তিনি বললেন, ”ঠিক আছে আমরা চললাম। তোমাদের উটই এখানে বসে বসে বিশ্রাম করুক।”

পরিশ্রান্ত কাফেলা আবার এগিয়ে চললো সামনের দিকে। অদুরে ‘আনা সাগর’। সাগরতো নয় একটি বিশাল হ্রদ। লোকে বলে আনা সাগর। আনা সাগরের পাড় ঘেষে অজস্র মন্দির। খাজা মইনুদ্দিন চিশ্তী (রঃ) এই হ্রদেরই এক ছোট টিলার উপর বসবাসের স্থান নির্বাচন করলেন। সে রাতেই মুখে মুখে আগন্তুক দরবেশের আগমন সংবাদ ছড়িয়ে পড়লো সর্বত্র। সকালে মহা রাজ পৃথ্বিরাজও শুনতে পেলেন এক আজব সংবাদ। উষ্ঠশালার কর্মচারীগন এসে জানালো। গতকাল সন্ধ্যায় যে উটগুলি আনাহয়েছিল সবগুলি এখনও শুয়ে আছে। কিছুতেই উঠবার নাম করছে না। সঙ্গে সঙ্গে মুসলমান দরবেশদলের ঘটনাও বর্নীত হলো রাজার কাছে। দরবেশদলের নেতা উটশালা পরিত্যাগের সময় বলেছিলেন , ”তোমাদের উটই এখনে বসে বসে বিশ্রাম করুক।”




খাজা মৈনুদ্দিন চিস্তির সমাধি বেদি যা রুপার রেলিং দিয়ে ঘেরা


ইতিপুর্বে বিক্ষিপ্তভাবে মুসলমান ফকিরদের সম্পর্কে এরকম অনেক কথা রাজার কর্নগোচর হয়েছিল। চিন্তিত হয়ে পড়লেন রাজা পৃথ্বিরাজ। মনে পড়ে গেল তার রাজমাতার ভবিষ্যতবানীর কথা। তিনি বলেছিলেন ”এক মুসলমান ফকিরের অভিসম্পাদেই পৃথ্বিরাজের রাজ্য ধ্বংস হয়ে যাবে।”একি তবে সেই ফকির ? সম্ভবত এই ফকিরের কথাতেই এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। কর্মচারীদেরকে ফকিরদের কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য নির্দেশ দিলেন রাজা। রাজ আদেশ পালন করল শ্রমিকেরা ।

হযরত খাজা মইনুদ্দিন চিশ্তী (রঃ) বললেন যাও। এ অবস্থা আর থাকবে না। উটশালায় ফিরে এসে সঙ্গে সবাই লক্ষ্য করল উটগুলো স্বাভাবিকভাবে চলাচল শুরু করেছে। ফকিরের কারামতি দেখে সবাই অবাক হয়ে গেল।

ধীরে ধীরে কৌতুহল নিবারনের জন্য লোকজন যাতায়াত শুরু করে দিল হযরত খাজার আস্তানায়। রাজা পৃথ্বিরাজ ভেবে কুল পান না কি করবেন তিনি। সমরাস্ত্র, সুসজ্জিত সৈন্যদল কোন কিছুই যে আর কাজে আসছে না। এক ফকিরের নিকট পরাজয় বরন করতে হবে তাকে ? ঐশ্বরিক ক্ষমতাধর এই ফকিরের আনুগত্য স্বীকার করবেন নাকি তাকে বিতাড়নের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবেন। একি বিশ্বয়কর সংকট। চুপ করে থাকলেও বিপদ । বিরুদ্ধাচরন করলেও সমস্যা। এদিকে দলে দলে লোকজন গ্রহন করছে ফকিরের প্রচারিত একত্ববাদী ধর্মমত।



রাজা ভেবে চিন্তে ঠিক করলেন ,হিন্দু ধর্মের আধ্যাধিক সিদ্ধপুরুষদের দ্বারা প্রতিরোধ করতে হবে ফকিরকে। তাই সিদ্ধপুরুষ বলে খ্যাত ”রামদেও” কে অনুরোধ করলেন তার যোগমন্ত্র বলে এই যবন ফকিরকে বিতাড়িত করতে। রামদেও রাজী হলেন। তার আধ্যাত্মিক শক্তিতে হযরত খাজা মইনুদ্দিন চিশ্তী (রঃ) কে পরাস্ত করার বাসনায় হাজির হলেন হযরতের দরবারে। হযরত খাজা মইনুদ্দিন চিশ্তী (রঃ) তখন ছিলেন ধ্যানমগ্ন। কিছুক্ষন পর চোখ খুললেন হযরত। দৃষ্টিপাত করলেন রামদেও খাজা মইনুদ্দিন চিশ্তী (রঃ) এর জ্যোতির্ময় চেহারার দিকে। মুগ্ধ হয়ে গেলেন রামদেও। তার আধ্যাতিক শক্তি মুহুর্তের মধ্যে নিশ্চিন্ন হয়ে গেল। অন্ধকারে আলো জ্বললে মুহুর্তেই যেমন করে অন্ধকার অপসারিত হয়। হজরত খাজার কদম মোবারকে লুটিয়ে পড়লেন রামদেও। নির্দ্বধায় স্বীকার করলেন ইসলাম। খাজা মইনুদ্দিন চিশ্তী (রঃ) তার নাম রাখলেন মোহাম্মদ সাদী। রামদেও এর ইসলাম গ্রহনের সংবাদ শুনে রাজা ক্ষোভে অস্থির হয়ে উঠলেন।

কিন্তু কিছুদিন পরই দেখা দিল আরেক বিপদ। আনা সগরের পানি শুধুমাত্র উচ্চ বর্নের হিন্দু এবং পুরোহিত সম্প্রদায় ছাড়া অন্য কেও ব্যবহার করতে পারতো না। নিম্ন বর্নের হিন্দুরা এটা তাদের ধর্মীয় বিধান বলে মনে করত। একদিন আনা সাগরে অজু করতে গেলন হজরত খাজার একজন সাগরেদ। পুরোহিতরা অপমান করে তাড়িয়ে দিলো তাকে। সাগরেদ সমস্ত ঘটনা বর্ননা করলেন খাজা মইনুদ্দিন চিশ্তী (রঃ) কে। হযরত খাজা মোহাম্মদ সাদীকে ”আনা সাগর” থেকে এক ঘটি পানি আনার নির্দেশ দিলেন। নির্দেশ মত মোহাম্মদ সাদী ‘আনা সাগর’ থেকে এক ঘটি পানি আনতেই দেখা গেলো এক আশ্চর্য দৃশ্য। কোথায় সাগর ? সব পানি তার শুকিয়ে গিয়েছে একেবারে। এই আলৌকিক ঘটনা রাজাকে জানালো প্রজারা। বিব্রত বোধ করলো রাজা। রাজা বাধ্য হয়ে আবারও তাদের প্রজাদের দুর্ব্যবহারের জন্য ফকিরের কাছে ক্ষমা চাইতে নির্দেশ দিলেন রাজা। প্রমাদ গুনলেন পুরোহিত সম্প্রদায়। কিন্তু উপায়ন্তর না দেখে তারা খাজা মইনুদ্দিন চিশ্তী (রঃ) এর কাছে গিয়ে ক্ষমা ভিক্ষা করলেন । মানুষের দুর্দশা দেখেও পুরোহিতদের ক্ষমার প্রেক্ষিতে মোহাম্মদ সাদীকে পুনরায় ঘটিতে ভরা পানি আনা সাগরে ঢেলে দিতে নির্দেশ দিলেন। নির্দেশ পালিত হলো। ঘটির পানি ঢেলে দেয়ার সাথে সাথেই ভরে গেল বিশাল হ্রদ ‘আনাল সাগর’।এই আলৌকিক ঘটনার পর বহুলোক ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় নিল খাজা মইনুদ্দিন চিশ্তী (রঃ)এর হাত ধরে।

রাজদরবারের একজন কর্মচারী ছিলেন খাজা মইনুদ্দিন চিশ্তী (রঃ) এর একান্ত অনুরক্ত। মুসলমানও হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। রাজা একথা জেনেও তাকে খুব পছন্দ করতেন তার উত্তম স্বভাব ও সততার জন্য। কিন্তু রাজদরবারের অন্যান্য সদস্যদের প্ররোচনায় এক সময় সেই কর্মচারীর উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলেন রাজা। খাজা মইনুদ্দিন চিশ্তী (রঃ) এর কাছে বার বার হেনস্ত হবার সমস্ত ক্ষোভ যেন গিয়ে পড়লো তার উপর। মুসলমান কর্মচারী সমস্ত দুঃখের কথা খাজা মইনুদ্দিন চিশ্তী (রঃ) এর কাছে বর্ননা করার পর খাজাকে অনুরোধ করলেন তার জন্য রাজার কাছে একটি সুপারিশ পত্র পাঠাতে। পর দুঃখে কাতর খাজা মইনুদ্দিন চিশ্তী (রঃ) একান্ত বিনয় ও নম্রতার মাধ্যমে সেই কর্মচারীর পক্ষে একটি সুপারিশ পত্র পাঠালেন। সেই সঙ্গে রাজাকে জানালেন ইসলাম গ্রহনের একান্ত আহ্বান। চিঠি পেয়ে রাগে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেললেন পৃথ্বিরাজ। খাজা মইনুদ্দিন চিশ্তী (রঃ) এর বিরুদ্ধে উচ্চারন করলেন অশালীন বক্তব্য। সংবাদ শুনে খাজা মইনুদ্দিন চিশ্তী (রঃ) এর প্রেমময় অন্টরেও প্রজ্জলিত হলো রুদ্ররোষের সর্বধ্বংসী আগুন। তিনি একটুকরা কাগজে লিখে পাঠালেন রাজা পৃথ্বিরাজকে-”মান তোরা যেন্দা বদস্তে লশকরে ইসলাম বছোপর্দম”। অর্থাৎ আমি তোমাকে তোমার জীবিতাবস্থায় মুসলিম সেনাদের হাতে সোদর্প করলাম।


আনা সাগরের তীরে প্রায় ৪৮৬ ফুট উচ্চতায় আজমীর শরীফ দরগা


এর পরেই স্বপ্ন দেখলেন সুলতান শাহাবুদ্দিন মোহাম্মদ ঘুরী এবং উনার নেতৃত্বেই হিন্দুস্থানে উড়ল বিজয় পতাকা এবং পতন হলো মহারাজা পৃথ্বিরাজের। শাহাবুদ্দিন মোহাম্মদ ঘুরীর সেই স্বপ্ন এবং হিন্দস্থান জয়ের ইতিহাস নিয়ে লিখবো অন্য সময়।

আজমিরের ইতিহাসে মিশে আছে সুলতানুল হিন্দু খাজা মইনউদ্দিন চিশতি (রহ.)-এর অম্লান স্মৃতি।

খাজা মঈনুদ্দিন চিশতি ৬৩৩ হিজরীর ৫ রজব দিবাগত রাত অর্থাৎ ৬ রজব সূর্যোদয়ের সময় ইনতিকাল করেন। তখন তার বয়স হয়েছিল ৯৭ বছর। বড় ছেলে খাজা ফখরুদ্দিন চিশতি তার নামাজে জানাজায় ইমামতি করেন। প্রতিবছর ১লা রজব হতে ৬ রজব পর্যন্ত আজমির শরীফে তার সমাধিস্থলে ওরস অনুষ্ঠিত হয়। নানা ধর্ম, বর্ণ ও গোত্রের মানুষ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ হতে সমবেত হয়।

আজমিরে খাজা সাহেবের দরগাহে বিরাজ করে এক আধ্যাত্মিক পরিবেশ। খাজা সাহেবের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সমবেত হয় ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে শত শত নারী ও পুরুষ। কাঁচা ও তাজা ফুলের ঢালি দিয়ে বক্তরা নিবেদন করে শ্রদ্ধা। বিতরণ করা হয় তবারুক। অবিরাম চলে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, যিকর ও তাসবিহ।

মহান স্রষ্টা ও পরিপালক আল্লাহর গুণকীর্তন, তৌহিদের পুনরুচ্চারণ আর নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রিসালতের পবিত্র ধ্বনি গুঞ্জরিত হয় উপমহাদেশের আধ্যাত্মিক কেন্দ্র আজমির শরিফের খাজা সাহেবের দরগাহ ঘিরে। মানুষ তার তাপিত ও পীড়িত হৃদয় নিয়ে আসে আল্লাহর রহমত, বরকত, মাগফিরাতের আশায়। তৌহিদের রশ্মিতে মুসলমান এবং সমগ্র ভারতবাসীকে ইসলামের প্রেম, সৌহার্দ্য, ভালোবাসা, মানবসেবার শিক্ষা দেয় খাজা সাহেবের আজমির শরিফ।


bottom of page